মৃত মানুষের মুখ অন্যের চেহারায় সফল প্রতিস্থাপন

Rate this item
(2 votes)

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত এক ব্যক্তির পূর্ণ চেহারা অপর এক ব্যক্তির মুখে সফল প্রতিস্থাপন করেছেন চিকিৎসকরা। মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মুখায়বয়ব প্রতিস্থাপনের অস্ত্রোপচার হয় তিন বছর আগে। আর এটি নিয়ে কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে।

বিবিসি বলছে, দুইদিন ধরে ৩৬ ঘণ্টার এই ম্যারাথন অস্ত্রোপচার শেষ হয় ২০১২ সালের ১৯ মার্চে।

মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আর অ্যাডামস কওলে শক ট্রমা সেন্টারে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিভাগের ১৫০ জনের একটি দলের এক দশকের প্রচেষ্টার ফসল এই সফল মুখাবয়ব প্রতিস্থাপন।

তিনবছর আগে অস্ত্রোপচার হলেও বিশ্বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রকাশ করে গত বুধবার। এই তিন বছর তারা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছিলেন।

ওই দলের প্রধান ডা. এডওয়ার্ডডো ডি রডরিগেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ''আমরা শৈল্যচিকিৎসা বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সমন্বয়ের মাধ্যমে রোগীর চেহারার মধ্যভাগ, ম্যাক্সিলা, দাঁতসহ ম্যান্ডবল এবং জিহ্বার কিছু অংশ প্রতিস্থাপন করেছি। কপাল থেকে গলা পর্যন্ত মুখের নরম টিস্যু, তার নিচের মাংসও প্রতিস্থাপন করেছি, যেন তার মুখের অভিব্যক্তিতে কোন সমস্যা না আসে। প্রতিস্থাপন করা হয়েছে মুখের সব স্নায়ুগুলোও যেন অনুভবে কোন ব্যাঘাত না ঘটে।''

''আমরা শুধু মুখায়বয়ব প্রতিস্থাপন করেই থামতে চাইনি, চেয়েছি যেন মুখের নান্দনিকতায় কোন ঘাটতি না থাকে।''

যার মুখে ওই মৃতব্যক্তির মুখাবয়ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তিনি রিচার্ড নরিস (৩৭), যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার অধিবাসী। ১৫ বছর আগে শটগানের গুলিতে তার মুখের প্রায় পুরোটায় নষ্ট হয়ে যায়। এই অস্ত্রোপচারের আগ পর্যন্ত তিনি অনেকটাই নিভৃতচারী ছিলেন। তার নাক, চোয়াল, জিহ্বা প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের চ্যানেল নাইনের একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় মৃত ব্যক্তির বোন তার ভাইয়ের মুখ দেখে অভিভূত হয়ে পড়ার দৃশ্য। ভাইয়ের অবয়ব নরিসের মুখে ছুঁয়ে দেখার সময় টলমল চোখে তাকিয়ে ছিলেন তিনি।

''এই সেই চেহারা যার সঙ্গে আমি বেড়ে উঠেছি''- বলেন তিনি।

তার ভাই ২১ বছর বয়সী জসোয়া অ্যাভারসানো এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান। কানাডীয় গণমাধ্যম সিটিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারের জসোয়ার মা গ্রুয়েন অ্যাভারসন বলেন, ''ওকে দান করার সিদ্ধান্তটা খুবই কষ্টের ছিল, কিন্তু আমরা আসলে ওর সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছি।''

''নরিসকে দেখলে, ওকে কথা বলতে দেখলে আমাদের মনে হয় আমি আমার ছেলে সঙ্গে কথা বলছি। ওর মধ্যেই আমি আমার ছেলেকে দেখতে পাই।''

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসথেটিক প্লাস্টিক সার্জনের সাবেক সভাপতি ব্যারি জোন্স বিবিসিকে বলেন, ''যে কোন স্বজনের পক্ষে গ্রহিতার সঙ্গে সামনা সামনি দেখা করা আসলে প্রায় অসম্ভব একটি ব্যাপার। এই ঘটনা সত্যিই একটা হৃদয়ঘন মুহূর্তের জন্ম দিয়েছে।''

0 awesome comments!

খবর টবর

Scroll to Top