মাটি খুঁড়লেই গুপ্তধন
নওগাঁর পোরশা উপজেলা সদরের টেকঠা নামক একটি ভিটার মাটি যেন সোনার চেয়েও খাঁটি হয়ে গেছে। কথাটির প্রমাণ মিলেছে উপজেলার নিতপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রঘুনাথপুর গ্রামের পরেই পূর্ণভবা নদীর টেকঠা ভিটামাটিতে। নদীর পূর্ব পাড় প্রায় ৩ কিলোমিটারের মধ্যে যে কোন জায়গা খনন করলেই মিলছে নানা প্রকার মূল্যবান গুপ্তধন। আর এভাবে দুই বছর থেকে প্রায় গড়ে দেড়’শ লোকজন দিনের পর দিন খেয়ে না খেয়ে পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে মাটি খনন করছেন। এদিকে সম্পদের মান অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে বিশ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকায়।
সরেজমিনে জানা গেছে, দুই বছর আগে কোন এক লোক টেকঠা নামক ভিটা এলাকায় মাটি কাটতে গিয়ে কিছু মূল্যবান সম্পদ পান। এখবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় শত শত লোকের মাটি খনন। সে থেকে প্রতিদিন সকাল হলেই স্থানীয়রা কোদাল, শাবল দিয়ে মাটি খনন কাজে ব্যস্ত ছিল। প্রায় চার থেকে পাঁচ ফিট নিচে মাটি খুড়েলেই মিলছে মূল্যবান জিনিস। মাটি খনন করলেই পাওয়া যাচ্ছে ছোট বড় অনেক রকমের পাথরসহ মূল্যবান সম্পদ। স্বর্ণালঙ্কার, চেন, পঁয়সা, তাবিজ, পাথর, রূপার কলম ইত্যাদি। এগুলোর একেকটির রং একেক রকম। কোনটা লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ। স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি না করে নিজের কাছে রেখে দেয়া হচ্ছে। তবে কোন পাথর ছোট কিংবা বড় পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতারা সেখানে উপস্থিত থাকেন সর্বদাই। একেকটি পাথর আনুমানিক ১০ গ্রাম হলে তার মূল্য প্রায় ১৫ হাজার টাকা।
স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দা আমির উদ্দিন জানান, ওই গ্রামটিতে প্রায় ৫০ বছর আগে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করত। সেখানে একটি বড় কালীমন্দির ছিল। মন্দিরে নিয়মিত পূজা-অর্চনা করা হতো। হয়ত এই মন্দিরকে ঘিরে এখানে হাট-বাজার বসত। দেশ বিভাগের সময় হিন্দুরা ভারতে চলে যায়। তারা হয়তো তাদের মূল্যবান অনেক জিনিসগুলো নিয়ে যেতে পারেনি। পরে তাদের ঘর-বাড়ি এবং মন্দিরগুলো ভেঙ্গে মূল্যবান জিনিসগুলো মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়।
অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দা হুমায়ন রেজা জানান, প্রায় ৬৫০ বছর আগের সম্রাট শের শাহের আমলে সমগ্র ভারতবর্ষ ৪৭টি পরগনায় বিভক্ত ছিল। তার মধ্যে একটি পরগনা হলো পোরশার পার্শে¦র থানা গোমস্তাপুরের রোকনপুর নামক স্থান। পরে সম্রাট শাহজাহানের ছেলে সুজাউদ্দীনের আমলে সুদূর রাজমহল থেকে রোকনপুর পর্যন্ত সমুদ্রিক এলাকা ছিল। তখন বাংলার সুবাদার ছিলেন শাহ সুজা। সে সময়ে নৌকা বা জাহাজযোগে বহু মালামাল এখানে আমদানি ও রপ্তানি হতো। হয়তো কোন দুর্ঘটনায় সম্র্রাটদের সম্পদগুলো এ মন্দিরের পাশে মাটির নিচে চাপা পরে যায়। যে নদীর পাশের এলাকায় পাথর উঠছে ঠিক সেই জায়গায় হিন্দুদের কালীমন্দির ছিল। যার প্রমাণস্বরূপ কালিদহ বলে একটি কূপ আজও বিদ্যমান আছে নদীতে। সেখানে তারা পূর্জা শেষে “কালী-মায়ের” মূর্তি বিসর্জন দিতেন। কাজেই বহু মূল্যবান ধনরত্ন মাটির নিচে পড়ে থাকা অসম্ভবের কিছু নয়।
পার্শ্ববতী গ্রাম বিষ্ণপুর থেকে আসা মনিরুল ইসলাম জানান, গত তিনদিন ধরে তিনি মাটি খুড়ছেন। সেখানে একটি জালিবল পেয়েছেন। তা বিক্রি করেছেন ছয় হাজার টাকায়। নিতপুর থেকে আসা রুস্তম আলী চকচকে কাচ টুকরোর মত একটা বস্তু পেয়েছেন। তা তিন’শ টাকা দাম বলেছে। এছাড়া জহুরুল ইসলাম দুটি বোতাম ও একটি মার্বেল পেয়েছেন যা পাঁচ’শ টাকা দিয়ে বিক্রি করেছেন।
স্থানীয় নজরুল ইসলাম জানান, একটি জালি পোটল ও একটি ফুটবল তিরপান্ন হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। তোফায়ের নামে এক যুবক জানান, সাতদিন খননেন পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি গোলাপি বল পেয়েছি। সেখানে থাকা এক ক্রেতা তার দেড়শ’ টাকা দাম করেছেন। তার দাম মনমত না হওয়ায় তিনি বিক্রি করেননি।
ক্রেতা সাদু জানান, পয়সা, তাবিজ, পাথর, রূপার কলম, ছোট বল, বড় ধরনের বল, আকার, রং (লাল, কাল, সাদা, কমলা, সবুজ) অনুয়ায়ী একেকটির গুণগত মান অনুযায়ী দাম দিয়ে কিনে নেয় হয়। এরপর সংবাদ দিলে বাহিরের এলাকা থেকে বড় বড় লোক এসে তারা সেগুলো তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যায়। তবে পাথরসহ বিভিন্ন মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলনকারীরা বিক্রি করলেও স্বর্ণালঙ্কার কেউ বিক্রি করেন না।
এলাকাবাসী রইচ উদ্দিন জানান, গত দুই বছর থেকে শত শত সাধারণ মানুষ মাটি খনন করে মাটির নিচে থাকা মূল্যবান সম্পদগুলো তুলে নিয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসন এগুলো উত্তোলন বন্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। মূল্যবান সম্পদগুলো উত্তোলন বন্ধ করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। সরকারী উদ্যোগে সেখানে খনন করলে মূল্যবান কিছু বেড়িয়ে আসবে বলেও তিনি জানান।
এ প্রসঙ্গে পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন শামীম জানান, বিষয়টা আমার জানা নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উদ্ধতন কর্মকর্তা, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এবং জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 
  
		  	 উঁচু একটা পাহাড়, সেখানে দাঁড়িয়ে খোশমেজাজে গল্প করছে প্রেমিক ও…
	      
	      
      	      	উঁচু একটা পাহাড়, সেখানে দাঁড়িয়ে খোশমেজাজে গল্প করছে প্রেমিক ও…		 'লিভ-ইন' বা বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকা নিয়ে ভারতীয় সমাজের বিতর্কের…
	      
	      
      	      	'লিভ-ইন' বা বিবাহপূর্ব নারী-পুরুষ একসঙ্গে থাকা নিয়ে ভারতীয় সমাজের বিতর্কের…		 দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে নিজেদের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন এক…
	      
	      
      	      	দীর্ঘ প্রায় চার বছর ধরে নিজেদের বিয়ের প্রস্তুতি নিয়েছেন এক…		 পৃথিবীতে বিচিত্রের শেষ নেই। অবাক হলেও সত্যি । চীনের কিছু…
	      
	      
      	      	পৃথিবীতে বিচিত্রের শেষ নেই। অবাক হলেও সত্যি । চীনের কিছু…		 অতিরিক্ত মদ্যপানে বেশ বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন তালোয়া ফস্টার। নিজে ট্রাক…
	      
	      
      	      	অতিরিক্ত মদ্যপানে বেশ বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন তালোয়া ফস্টার। নিজে ট্রাক…		