‘এক্স মেন’ এখন বাস্তবে!

Rate this item
(3 votes)

নিজের মনের সাহায্যে আরেকজন মানুষের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করা গেলে কেমন হবে? এ ধরনের স্বপ্ন কমিক বইপত্র ও এক্স মেন-এর মতো চলচ্চিত্রে প্রায়ই দেখা যায়। তবে য্ক্তুরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী এবার বাস্তবেই ব্যাপারটি করে দেখিয়েছেন।

ধরা যাক, দুজন ব্যক্তি পরস্পর থেকে এক মাইল দূরে অবস্থান করছেন। তাঁদের একজন অপরজনের হাতের নিয়ন্ত্রণ নেবেন। এ লক্ষ্যে গবেষকেরা একজনের মস্তিস্ক তরঙ্গকে রূপান্তরে ব্যবহার করেন তড়িৎ-চুম্বক এবং কম্পিউটার। এই প্রযুক্তিতে নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিটির মস্তিষ্কের সংকেতগুলো রেকর্ড করা হয়। তিনি একটি কম্পিউটার গেম বা খেলায় অংশ নেন। পরে সেই সংকেতগুলো দূরবর্তী ব্যক্তির মস্তিষ্কে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রবাহিত করা হয়। ফলে তাঁর হাতের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুগুলো উদ্দীপিত হয়।

এ প্রক্রিয়ায় নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিটি নিজে কোনো ধরনের কম্পিউার নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একটি কম্পিউটার গেম বা খেলায় প্রথম ব্যক্তি বা তাঁর হাতকে ব্যবহার করার সুযোগ পান। এই প্রযুক্তি আরেকজন মানুষের শরীর ও চিন্তাভাবনার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এক্স মেন ছবিতে অধ্যাপক জেভিয়ারকে এ ধরনের কাজ করতে দেখা যায়। এক মস্তিস্ক থেকে অন্য মস্তিস্ক যোগাযোগ স্থাপনের প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আরও উন্নত হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এতে করে হয়তো এমন দিনও আসবে, যখন পারস্পরিক যোগাযোগের জন্য ভাষা ব্যবহার করার প্রয়োজন কমে আসবে।

সংশ্লিষ্ট গবেষকেরা মনে করছেন, উল্লিখিত প্রযুক্তিটি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক) এবং অন্যান্য ত্রুটিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়া মানুষের মধ্যে তথ্য সরবরাহ করতেও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে। যেমন: দক্ষ শল্যচিকিৎসকেরা (সার্জন) জটিল কোনো অস্ত্রোপচারের সময় এই প্রযুক্তির সাহায্যে অন্য চিকিৎসকদের জরুরি পরামর্শ দিতে পারবেন। অথবা জরুরি পরিস্থিতিতে কোনো উড়ন্ত বিমানের নিয়ন্ত্রণ ভূমি থেকেই নিতে পারবেন বিশেষজ্ঞ বৈমানিকেরা।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী রাজেশ রাও বলেন, তাঁদের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে এক মস্তিস্ক থেকে সংগৃহীত তথ্য অন্য মস্তিস্কে স্থানান্তর করা সম্ভব। এতে করে মানুষ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কোনো কাজ সম্পন্ন করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে মস্তিস্ক থেকে মস্তিস্ক তথ্যপ্রবাহের যন্ত্র বা ইন্টারফেস ব্যবহার করতে হবে। এ প্রযুক্তি মানুষে মানুষে যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি মস্তিস্কের কার্যপদ্ধতি অনুসন্ধানের গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।

এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি পাবলিক লাইব্রেরি অব সায়েন্স ওয়ান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। মস্তিস্ত থেকে মস্তিস্ক যোগাযোগের পদ্ধতিটি স্বেচ্ছাসেবীদের ওপর সফলভাবে প্রয়োগের তথ্য-উপাত্ত ওই প্রতিবেদনে সন্নিবেশিত হয়েছে। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত ব্যক্তির কৃত্রিম হাত নিয়ন্ত্রণ এবং কম্পিউটার গেম বা খেলার সামর্থ্য অর্জনের বিষয়টি বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। এদিকে ফ্রান্স ও স্পেনের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি তথ্য সরবরাহের একটি পদ্ধতি প্রয়োগ করে ভারতীয় সহযোগীদের কাছে বার্তা পাঠানোর সামর্থ্য প্রমাণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা মস্তিস্ক থেকে মস্তিস্কে বার্তা পাঠানোর অনুরূপ একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এসব সাফল্যের ভিত্তিতে এখন বিভিন্ন ধারণা, বিমূর্ত ভাবনা, শারীরিক নড়াচড়া প্রভৃতি ব্যতিক্রমী তথ্যও পাঠানো সম্ভব হবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন।

এদিকে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক অ্যান্ড্রিয়া স্টকো ও তাঁর সহযোগীরা মার্কিন সেনাবাহিনীর গবেষণা দপ্তরের অর্থায়নে এক গবেষণায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে তিন জোড়া ব্যক্তির মস্তিস্ককে পরীক্ষামূলকভাবে সংযুক্ত করার চেষ্টা করেন। স্টকো মনে করেন, স্নায়ুবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি বর্তমান গতিতে অব্যাহত থাকলে মস্তিস্ক থেকে মস্তিস্কে যোগাযোগের ব্যাপারটা আগামী ২০ বছরের মধ্যে একেবারে সহজ হয়ে যাবে।

0 awesome comments!
Last modified on Saturday, 24 January 2015 12:25

Latest from Super User

Scroll to Top