এবার রোবট চলবে বাংলা ভাষায়!

Rate this item
(2 votes)

রেশমা রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর উদ্ধার হয়ে চমকে দিয়েছিল সবাইকে। কিন্তু রেশমা জীবিত উদ্ধার হলেও বাঁচার আকুতি জানাতে জানাতে ধ্বংসস্তূপে মরতে হয়েছিল শত শত মানুষকে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিসসহ দেশের সব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেনি চাপা পড়া অনেক প্রাণ। এ দুর্ঘটনায় মানুষের এমন অসহায়ত্ব দেখেই রোবট তৈরির চিন্তা আসে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের দুই শিক্ষার্থী মো. শামসুল আলম সম্রাট ও রাকেশ ঘোষের। রোবট চলবে বাংলা ভাষায়!

চিন্তাকে প্রথমে পরিকল্পনায় রূপান্তর করেন তারা। এর পর সে পরিকল্পনা এনেছেন তারা বাস্তবে। এ জন্য তাদের সময় লেগেছে বছরখানেক; টাকা লেগেছে ২০ হাজার। এভাবেই সপ্তাহ দুয়েক আগে তারা পূর্ণতা দিয়েছেন বাংলা ভাষা বুঝতে সক্ষম দেশের প্রথম মানবাকৃতির রোবটকে!

রোবট তৈরির দুই উদ্ভাবক বলছেন, ‘এর আগে বাংলা ভাষায় নিয়ন্ত্রণযোগ্য একটি রোবট তৈরি হলেও তা ছিল খেলনা গাড়ি আকৃতির। এটাই বাংলাদেশে তৈরি হওয়া প্রথম দুই পা-বিশিষ্ট রোবট, যা মুঠোফোনের মাধ্যমে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।’

তাদের এ দাবি সমর্থন করেন এ প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক চুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস কৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী দেলোয়ার হোসেনও। ড. কাজী দেলোয়ার হোসেন জানান, একাডেমিক কাজের অংশ হিসেবেই সম্রাট ও রাকেশ রোবটটি তৈরি করেছেন। রোবটটি এখন বাংলা ভাষায় ‘ডানে যাও’, ‘বাঁয়ে যাও’, ‘সামনে যাও’, ‘পেছনে যাও’- এমন কমান্ড শুনে চলতে পারে। এটি নিয়ে আরেকটু কাজ করলে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষকেও উদ্ধার করতে পারবে রোবটটি।

কী কাজ করতে পারবে এই রোবট: রোবটের অন্যতম উদ্ভাবক মো. শামসুল আলম সম্রাট বলেন, ‘রোবট কখনও মানুষের বিকল্প হতে পারেনি, পারবেও না। তবে মানুষের ক্লান্তি, জীবনের ভয়সহ বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে মানুষের চেয়ে কার্যকরী রোবট।’ তিনি জানান, তাদের তৈরি রোবটটি দুর্গম স্থানে কিংবা মানুষের জন্য নিরাপদ নয় এমন স্থানে কাজ করতে সক্ষম। রেডিও অ্যাকটিভ এলাকা, বোমা থাকার সন্দেহভাজন এলাকা কিংবা রানা প্লাজার মতো ধ্বংসস্তূপের ভেতরেও কাজ করতে পারবে রোবটটি। এ ছাড়া নগরীর ড্রেন পরিষ্কারের মতো কাজেও রোবটটি ব্যবহার করা যাবে। যেসব শিল্প-কারখানায় বছর ধরে একই লোক একই কাজ করছে, সেগুলোও করানো যাবে এই রোবট দিয়ে। এটি বাংলাভাষী যে কোনো ব্যক্তি পরিচালনা করতে পারবেন। এমনকি শারীরিক প্রতিবন্ধীদেরও কথা শুনবে এই রোবট।

যেভাবে কাজ করে রোবট: উদ্ভাবক রাকেশ ঘোষ জানান, বাংলা ভাষায় রোবটটিকে মুঠোফোনে নিয়ন্ত্রণের জন্য লাগবে উইন্ডোজ স্মার্টফোন। অ্যাপটি ইনস্টল করার পর নির্দেশনা অনুযায়ী মুঠোফোনের স্ক্রিনে স্পর্শ করে কয়েকটি ধাপ সম্পন্ন করতে হবে। শুরুতে মুঠোফোনের ব্লুটুথ এবং রোবটের ব্লুুটুথের মধ্যে একটি গোপন কোড দিয়ে সংযোগ তৈরি করতে হয়। এর পর মোবাইলে বাংলায় নির্দেশনা দিলে রোবটটি সে অনুযায়ী কাজ করবে।

ব্যবহারকারীর পরিবর্তন হলেও সবার ডাকেই রোবটটি সাড়া দেবে। ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেও রোবটটিকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ করানো যাবে। সে ক্ষেত্রে প্রোগ্রামিং ও রোবট বডির পরিবর্তন করতে হবে। নিরাপত্তার জন্য এ রোবটে গোপন কোড ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

যাওয়া যাবে অনেক দূর: রোবটটির বহুমুখী ব্যবহার আরও বাড়ানো যাবে বলে মনে করেন এর উদ্ভাবক সম্রাট ও রাকেশ। সম্রাট বলেন, ‘রোবটটি মানবাকৃতির হলেও এর বডি মুভমেন্ট আরও সহজ করার সুযোগ রয়েছে। দুর্গম এলাকায় এ রোবটকে দিয়ে ভিডিও করার কাজও করানো যাবে। এখন ২২০ ভোল্টের এসি কারেন্টকে ৬০ ভোল্টে রূপান্তর করে আমরা রোবটটি পরিচালনা করছি। মেকানিক্যাল কিছু কাজ করলে ব্যাটারি দিয়েও পরিচালনা করা যাবে এ রোবট। এসব পরিবর্তন সংযোজন করতে আরও অন্তত ৩০ হাজার টাকা লাগবে। এখন মাত্র ২০ হাজার টাকা দিয়েই বাংলা ভাষা বুঝতে সক্ষম মানবাকৃতির এ রোবটটি তৈরি করেছি আমরা

0 awesome comments!
Last modified on Saturday, 24 January 2015 12:33

Latest from Super User

Scroll to Top