সত্যিই কি মানুষ চন্দ্র জয় করেছে!

Rate this item
(1 Vote)

মানব ইতিহাসে ১৯৬৯ সালটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই বছরের ২০ জুলাই তারিখে সমগ্র বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে সর্ব প্রথম চন্দ্রে মানুষের অবতারণা ঘটে। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাসা’র মহাকাশ যান এপোলো-১১ চড়ে এদিন প্রথম মানুষ হিসেবে চাঁদে পদার্পণ করেন তিন ব্যক্তি। যারা হলেন নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও বুজ অলড্রিন। চাঁদে অবতরণের পর এই দিনটি ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ঐতিহাসিক দিন।

যে চাঁদকে মানুষ রাতে উচ্চ আকাশে দেখতে পায় সেখানেই মানুষের গমন ছিল অতি রোমাঞ্চকর এক ঘটনা। চাঁদে মানুষ পাঠানোর সফলতার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বুকে নতুন এক সম্মানের আসনে আসীন হয়। মানুষ যে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে এটি ছিল তারই একটি উজ্জ্বল প্রমাণ। আমরা এতো দিন বই-পুস্তক, টিভি-রেডিওতে মানুষের এই চাঁদে যাওয়ার কথা শুনে রোমাঞ্চিত হয়েছি কিন্তু আপনি কি জানেন, মানুষের চন্দ্র বিজয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় এক রহস্য।

অনেকে শুনলে হয়তো অবাক হবেন কিন্তু এটাই ঠিক যে চাঁদে সত্যিই মানুষ যেতে পেরেছে কিনা সেটা আজও এক বিরাট রহস্য।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৯ সালে চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে বিশ্বে এক বিরল সম্মানের আসনে সমাসীন হয়েছে। কিন্তু সত্যিই কি মানুষ চাঁদে গিয়েছে? রাশিয়া, চীন, জাপান, ফ্রান্স ও ভারতের মতো উন্নত দেশগুলোর বিজ্ঞানীরা বলেন পৃথিবীর ইতিহাসে আজ পর্যন্ত কোনও মানুষ চাঁদে অবতরণ করতে পারে নি। নাসা’র মাধ্যমে আমেরিকার চাঁদে মানুষ পাঠানোর ঘটনাটি ছিল শুধুই সাজানো নাটক। মার্কিনরা এই নাটক সৃষ্টি করার মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বকে বোকা বানিয়েছিল। তারা বলেন নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও বুজ অলড্রিনের চাঁদে যাওয়ার সমগ্র ঘটনাটি ছিল সিনেমা। মার্কিনরা বিশ্বে নিজেদের সম্মানকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য তারা এই নাটক সৃষ্টি করেছিল। চাঁদে যাওয়ার এই সমগ্র কাহিনীটা ঠিক তেমন ভাবে সাজানো হয়েছিল যেমন ভাবে সাজানো থাকে সিনেমার স্ক্রিপ্ট। উন্নত বিশ্বের বিজ্ঞানীদের ধারনা চাঁদে যাওয়ার এই নাটকের শুটিং করা হয়েছিল দুর্গম কোনও মরু অঞ্চলে, যেখানে নাটক সাজালে কেউ বুঝতে পারবে না। হলিউডে মার্কিন পরিচালকরা এত অবিশ্বাস্য সব সিনেমা তৈরি করে থাকেন যে তাদের পক্ষে এরকম একটি চন্দ্র বিজয়ের শুটিং করা খুবই সহজ ব্যাপার। কিছু কিছু বিজ্ঞানী এই চন্দ্র বিজয় নাটকের পরিচালকের নামও বলে দিয়েছেন, তাদের মতে এই মিথ্যা কাহিনীর পরিচালক ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন পরিচালক স্ট্যানলি কুবরিক।

বিজ্ঞানীরা নাসা’র সমালোচনা করে বলেন ১৯৬৯ সালে নাসা’র এমন কোনও উন্নত প্রযুক্তি ছিল না যা দ্বারা মানুষ চাঁদে গমন করতে পারে। এপোলো-১১ নামের মহাকাশ যানটি ছিল সাজানো নাটকের অংশ। ১৯৬৯ সালে যদি সত্যিই মার্কিনরা চাঁদে মানুষ পাঠিয়ে থাকে তাহলে তারপর আরও প্রায় ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও তারা আর দ্বিতীয়বার চাঁদে মানুষ পাঠাতে পারছে না কেন? ১৯৬৯ সালের চেয়ে বর্তমান আমেরিকা আরও অনেক বেশি উন্নত, ১৯৬৯ সালের চেয়ে এখন নাসা’র কাছে আরও উন্নত প্রযুক্তির বিভিন্ন মহাকাশ যান আছে তবে এখন তারা চাঁদে আর মানুষ পাঠাতে পারছে না কেন?

মানুষ সত্যিই চাঁদে গেছে নাকি এটা বিশ্বের মানুষের সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রতারণা সেটা আরও বেশি ঘনীভূত হয় মার্কিন রকেট প্রযুক্তি তত্ত্বের প্রবক্তা বিল কেসিং এর বক্তব্যের পর।

১৯৭৪ সালে তিনি একটি বই লেখেন “আমেরিকার ৩০ বিলিয়ন ডলারের জোচ্চুরি” শিরোনামে। এই গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন আমরা কখনই চাঁদে যায়নি। চাঁদে যাওয়ার বিষয়টি ছিল বিশ্ববাসীর সাথে প্রতারণা। তিনি আরও উল্লেখ করেন এপোলো-১১ মহাকাশ যানটি উৎক্ষেপণের কিছু সময় পর যানটি অদৃশ্য হয়ে যায়। এরপর তিন নভোচারী বিশিষ্ট লুনার ক্যাপসুলটি একটি সামরিক কার্গো বিমানে সরিয়ে ফেলা হয় এবং আট দিন পর ক্যাপসুলটি প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দেয়া হয়। তারপর নভোচারীদের নিয়ে নেভাদার মরুভূমিতে কঠোর সামরিক প্রহরার মধ্য দিয়ে চন্দ্র বিজয়ের নাটকটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মহাকাশচারীরা চাঁদে অবতরণ করার পর সেখানে তাদের কয়েকটি ছবি ও ভিডিও তোলা হয় এবং চন্দ্র থেকে তারা কয়েকটি পাথর সংগ্রহ করে নিয়ে আসেন। এই ছবি, ভিডিও ও পাথরগুলো তাদের সত্যিকারের চাঁদে যাওয়ার প্রমাণ বহন করে। কিন্তু বিরুদ্ধবাদীরা চাঁদের এই ছবি ও পাথর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা চন্দ্র বিজয়কে সাজানো নাটক হিসেবে প্রমাণের জন্য বেশ কয়েকটি যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।

পৃথিবী থেকে আমরা রাতের আকাশে নক্ষত্র বা তারকা দেখতে পায় সুতরাং চাঁদের রাতের আকাশে তারকাগুলোকে আরও উজ্জ্বল দেখানোর কথা। কিন্তু নভোচারীরা চাঁদে গিয়ে যে ছবি গুলো তুলেছেন তাতে কোনও ছবিতে চাঁদের আকাশে তারকা দেখা যাচ্ছে না।

চাঁদ থেকে ফেরার পর মহাকাশচারীরা বলেছিল সেখানে কোনও অক্সিজেন বা বাতাস নেই ফলে সেখানে স্বাভাবিক অবস্থায় এক মিনিটও বাঁচা সম্ভব নয়। কিন্তু চাঁদে থাকতে মহাকাশচারীদের যে ছবি তোলা হয়েছিল তাতে দেখা যায় চাঁদে তাদের পুতে রাখা মার্কিন পতাকা বাতাসে উড়ছে। তাহলে চাঁদে বাতাস না থাকলে তাদের পতাকা বাতাসে উড়ছিল কিভাবে। সেটা কি তাহলে পৃথিবীর বাতাস ছিল!

ছবিতে দেখা যায় নভোচারীরা যেখানে অবতরণ করেছিলেন সেখানে পাশাপাশি বস্তুগুলোর ছায়া পরস্পরকে ছেদ করেছে এবং বিভিন্ন বস্তুর ছায়া বিভিন্ন দিকে গেছে। কিন্তু চাঁদে শুধুমাত্র আলোর উৎস সূর্য হয়ে থাকলে বস্তুর ছায়া পরস্পরকে ছেদ না করে সমান্তরাল হওয়ার কথা। তাহলে কি সেখানে শুটিং করার সময় কৃত্রিম আলো ব্যবহার করা হয়েছিল!

মানব ইতিহাসে চন্দ্র বিজয় ছিল সবচেয়ে বড় ঘটনা তারপরও এই অভিযানের টেলিমেট্রি ডাটা পরে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। অবশ্য নাসা বলেছিল এই ডাটা তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ডাটা তাদের নিকট থেকে কিভাবে হারিয়ে যায় সেটা একটি প্রশ্নের বিষয়।

এই সকল বিষয়গুলো ছাড়াও ছোট খাটো অনেক অমীমাংসিত প্রশ্ন লুকিয়ে আছে চন্দ্র বিজয় কাহিনীতে। চন্দ্র বিজয় কর্মকা-ে জড়িত নভোচারীদের মধ্য থেকে গাস গ্রিসাম নামক এক নভোচারী চন্দ্র জয়ের পর নিহত হন। ধারনা করা হয় তিনি আমেরিকার এই প্রতারণার কথা বিশ্বকে জানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন তাই তাকে কৌশলে হত্যা করা হয়েছিল। কারোও কারোও মতে চন্দ্র বিজয়ের এই নাটক মঞ্চস্থ করা হয়েছিল মার্কিন ঘাটি ‘এরিয়া৫১’ তে। যে ঘাটিটি এতোটাই সুরক্ষিত যে কোনও সাধারণ মানুষকে সেখানে কখনও ঢুকতে দেয়া হয় না। এমনকি এই ঘাটির পাশ দিয়েও কেউ গেলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

চন্দ্র জয়ের বিরুদ্ধে এই সকল প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপনের পর চন্দ্র জয় নিয়ে শুরু হয়েছে কৌতূহল। মার্কিনরা সত্যিই কি চন্দ্র জয় করতে সক্ষম হয়েছিল নাকি এটা ছিল নিছক একটা প্রতারণা। তাই মহাবিশ্বের অন্যতম একটি প্রধান রহস্য এখন চন্দ্র বিজয়।

চন্দ্র বিজয় মিথ্যা প্রমাণকারী বিজ্ঞানীদের যুক্তির জবাবে নাসা তাদের বক্তব্যও প্রদান করেছে। স্বভাবসুলভ ভাবে নাসা তাদের উত্তরে বলেছে চন্দ্র বিজয় ছিল সত্য এবং এটি মানুষের এক মহা বিজয়। তারা বলেন চাদের আকাশে তারকা দেখতে না পাওয়াটা ছিল প্রযুক্তিগত ত্রুটি। নভোচারীদের এত উজ্জ্বল স্পেস স্যুট পরিধান করা ছিল যে, সেটার উজ্জ্বলতার কারণে হয়তো ক্যামেরায় তারকার ছবি ধরা পড়েনি। পতাকা উড়ার বিষয়ে তারা বলেন, চাঁদে বাতাস নেই তবে সেখানে এমন জিনিস থাকতে পারে যা দ্বারা পতাকা উড়েছে। পতাকা উড়ার জন্য যে শুধুমাত্র বাতাসের দরকার হবে তা কিন্তু নয় অন্য বায়বীয় পদার্থের দ্বারাও পতাকা উড়তে পারে।

নাসা’র বিজ্ঞানীরা বলেন, চাঁদে যদি সত্যিই বাতাস থাকতো তাহলে পতাকা উড়ার সাথে সাথে সেখানের বালি বা ধুলো উড়তেও দেখা যেত, কিন্তু কোনও ছবি বা ভিডিওতে বাতাসে ধুলো উড়তে দেখা যায় নি। নাসা’র স্পেস বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষ যে চাঁদে গিয়েছে তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথর। নাসা’র স্পেস সেন্টারের বিজ্ঞানী ড. ডেভিড ম্যাক বলেছেন, চাঁদ থেকে যে পাথরগুলো আনা হয়েছে সেগুলো পৃথিবীর পাথর থেকে ভিন্ন। চাদের পাথরের স্ফটিক কাঠামোতে পানির অস্তিত্ব নেই বললেই চলে, তাছাড়া পৃথিবীর পাথরে যেমন খনিজ পদার্থ ও কাদা-মাটির অংশ থাকে চাদের পাথরে এগুলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। চাঁদ থেকে নিয়ে আসা পাথরগুলো পরীক্ষা করে পাওয়া গেছে তিন মিলিয়ন বছর পূর্বের অগ্নুৎপাতের প্রমাণ। এছাড়াও এই পাথরে বিশেষ ধরনের কাচের সন্ধান পাওয়া গেছে যা পৃথিবীর পাথর সমূহে পাওয়া যায় না। অবশ্য চন্দ্র বিজয় বিরোধী বিজ্ঞানীরা বলেন চন্দ্র বিজয়কে প্রমাণের জন্য পাথর সম্পর্কে নাসা’র পরীক্ষার ফলও সাজানো হতে পারে।

 
চন্দ্র বিজয় মানব সভ্যতার সবচেয়ে ঐতিহাসিক ঘটনা। তবে চন্দ্র বিজয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী দানা বেধেছে অবিশ্বাসের জাল। নাসা চন্দ্র বিজয় সম্পর্কে নানান ধরনের প্রমাণ উপস্থাপন করলেও চন্দ্র বিজয়কে প্রতারণা প্রমাণের জন্য বিশ্বের অন্যান্য বিজ্ঞানীগনও শক্তিশালী সব যুক্তি উপস্থাপন করে আসছেন। তাই বিশ্বের কয়েক অংশের লোকজন মানেন মানুষ বাস্তবিকই চন্দ্র জয় করতে সক্ষম হয়েছে আবার কিছু অংশের মানুষ বিশ্বাস করেন মানুষ কখনও চাঁদে পৌছাতে পারেনি। এটা ছিল মার্কিনদের নিছক প্রতারণা। বিশ্বের দুই শ্রেণীর বিজ্ঞানীদের দুই রকম মতামত ও যুক্তিতর্কের মাঝে সাধারণ মানুষের কাছে চন্দ্র বিজয় এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এক রহস্য। মানুষ জানে না কোন যুক্তিতে তারা বিশ্বাসী হবে।

 

 

0 awesome comments!
Scroll to Top