টুকু মিয়া না আমার নাম আল আমিন

Rate this item
(0 votes)
‘এক বন্ধুর জন্য মহাখালীতে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একজন এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, আরে টুকু ভাই না। কেমন আছেন? অপরিচিত একটি লোকের এ আচরণে প্রথমে একটু অবাক হলাম, পরে বুঝতে পারলাম। এই ভদ্রলোক আমার অভিনীত ও মাসুদ সেজান পরিচালিত ‘রেড সিগন্যাল’ নাটকটির ভক্ত।

কারণ আমার অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল টুকু মিয়া’-এভাবেই ইদানিং রাস্তাঘাটে ভক্তদের কাছে ভালোবাসা পান অভিনেতা আল আমিন সবুজ। মুচকি হেসে জানাচ্ছিলেন তার এসব কথা।

তবে তার অভিনয়ের পথ চলার গল্পটা একটু ভিন্ন। বরিশালের মুলাদী উপজেলা থেকে স্কুল ও কলেজের সীমানা পার করে ২০০৬ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর একটি বায়িং হাউজের চাকরিতে যোগ দেন। সেখানে থাকা কালে ছবিয়ালের প্রোডাকশন ম্যানেজার পলাশ (বন্ধু) তাকে একদিন তাদের শুটিং দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

সেদিন মহাখালীর ডিএইচএস-এ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর নির্দেশনায় একটি বিজ্ঞাপনের শুটিংয়ে গিয়েই অনেকটা ভাগ্য খুলে গেল তার। শুটিং দেখার পর থেকে এসব কাজের প্রতি ভালোলাগা বেড়ে যায় আল আমিনের।

বললেন, ‘চাকরির পাশাপাশি প্রায়ই পলাশের কাছে এসে সেসসময় তার প্রোডাকশনের হিসাব-নিকাশ করে দিতাম। এরপর একদিন সরয়ার ভাইয়ের ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া আমাকে এখানে ফুলটাইম কাজ করার জন্য বসের (সরয়ার ভাই) নিকট সুপারিশ করেন। এরপর আমি সহকারি প্রোডাকশন ম্যানেজার হিসেবে সেখানে কাজ করার সুযোগ পাই ।’


কিন্তু নাটকে অভিনয় করার সুযোগ আসে তার ২০০৭ সালে। আশফাক নিপুণ এর পরিচালনায় এ নাটকটির নাম ছিল ‘মায়া’। ‘প্রথম নাটকে আমার চরিত্রটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নাটকে আমি এতিম ছেলের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। প্রচারের পর ভালো সাড়া পেয়েছি।’

এরপর বেশকিছু জনপ্রিয় বিজ্ঞাপনে তার মুখ দেখা যায়। এরমধ্যে রয়েছে কনফিডেন্স লবন, একটেল, বিলট্রেন্ট টিন, যমুনা-বসুন্ধরা গ্রুপ, শার্ক এনার্জিং ড্রিংক, স্প্রীন্ট মোবাইল, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ক্রাউন সিমেন্ট প্রভৃতি। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তবে এ সবগুলো বিজ্ঞাপনের নির্দেশক ছিলেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।

এ কাজগুলো দিয়ে অল্প সময়ে মানুষের কাছে পরিচিতি পান আল আমিন। তাই তিনি বলেন, ‘আমার বস হচ্ছে সরয়ার ভাই। আজকের আল আমিন হয়ে উঠার পেছনে তার কাছে আমি অনেক বেশি কৃতজ্ঞ।’

বরিশালের ছেলে আল আমিনের বাবার নাম এস্কান্দার। পেশায় একজন ডাক্তার এবং মা মনিয়ারা একজন গৃহিনী। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তার অবস্থান সবার বড়। তাই পরিবারের জন্য দায়িত্বটাও বেশি। জানতে চাইলাম, চাকরি তো আর করেননি। শুধু মিডিয়ার কাজ দিয়ে এই বাজারে টিকে থাকতে সমস্যা হয়েছে কি-না? উত্তরে বলেন, ‘হয়েছে। বিশেষ করে ছবিয়াল থেকে ২০১০-১১ সালে বের হয়ে বেশ কষ্টে দিন পার করেছি। তবে এখন অনেকটা ভালো আছি। বেশকিছু নাটকে টানা কাজ করছি।’

আর বর্তমানে রেদওয়ান রনি‘র ‘রেডিও চকলেট’, মাসুদ সেজানের ‘রেড সিগন্যাল’, মানিক মানবিক এর ‘কাম টু দ্য পয়েন্ট’ নাটকে অভিনয় করছেন আল আমিন।

এ কাজগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘ কাম টু দ্য পয়েন্ট নাটকে নমির চরিত্রে অভিনয় করে বেশ সাড়া পাচ্ছি। এখানে আমার চরিত্রটিও মজার। গল্পে আমার পাঁচ চাচাতো বোনের দেখাশুনার দায়িত্ব থাকে আমার। আর চাচীকে আপা ডাকতে হয়। বাকি নাটকগুলোর গল্পও বেশ মজার।’

আপনি তো সরয়ার ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন। নতুন কোন ছবিতে কি কাজ করছেন? এবার যেন নিজে থেকেই আগ্রহ নিয়ে বলা শুরু করলেন তিনি। ‘আমি দুটি ছবিতে কাজ করছি। দিলশাদুল হক শিমুল পরিচালিত একটির নাম ‘লিডার’। আরেকটির নাম ‘কি জানি কিসেরও লাগি’।

আর নতুন নাটক? ‘করছি তো। এই যেমন অনিমেষ আইচের গল্প ও আর কে এম মহাসিন এর পরিচালনায় ‘সিকিউরিটি’ ও ফয়সাল খান রিপন এর রচনা ও পরিচালনায় ‘মেড ইন বরিশাল’ নাটক দুটির কাজ সামনে আছে। আর রুপচাঁদা সরিষার তেলের বিজ্ঞাপনে মডেল হচ্ছি। ২৫ জানুয়ারি ধ্রুব হাসানের পরিচালনায় এর শুটিং করব।’

এক কথায় বললেন, ‘বর্তমানে ভালো আছি। অনেক কাজ হাতে আসে কিন্তু এখন বেছে বেছে কাজ করি। আর ২০১৩ সালের মাঝামাঝি নাট্যধারা থিয়েটারে কাজ শুরু করেছি। তাই অভিনয়টাই ভালোভাবে করে যেতে চাই।’
0 awesome comments!
Scroll to Top